ওষুধের দামে অরাজকতা, দিশেহারা সাধারণ মানুষ
- আপলোড সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ১২:২৮:৩৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৩-০৯-২০২৪ ১২:২৮:৩৪ অপরাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
চলতি বছরের শুরু থেকে দফায় দফায় জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কো¤পানিগুলো ওইসব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত। যদিও সরকারের পটপরিবর্তনের পর ওষুধের দাম খুব একটা বাড়েনি। তবে দাম না বাড়লেও এখনও অনেক ওষুধের দাম সাধারণ রোগীদের নাগালের বাইরে রয়েছে। ফলে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকে ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর ওষুধের অব্যাহত দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের একটি অংশ ওষুধ কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে বলেও জানা গেছে। সরেজমিনে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার একাধিক ওষুধ ফার্মেসি ঘুরে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী ও তাদের স্বজন এবং ওষুধ বিক্রেতাদের অভিযোগ, ওষুধের বাজারে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। এখানে ওষুধ প্রশাসনের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। মুক্তবাজারের যুক্তিতে অপরিহার্য এ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে কো¤পানিগুলো। মূলত ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায়ই এবং যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা না নেওয়ায় ব্যাপক হারে বাড়ছে ওষুধের দাম। ফলে এ খাতে জনসাধারণের ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নতুন সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
আর জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মানুষের সামর্থ্য বিচার করে রোগ-বালাই হয় না। আর ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই জনগণের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বাড়ানোর বিকল্প নেই। যদিও ওষুধের দাম বাড়ার পেছনে ব্যাংক ঋণের সুদ বেশি, ডলার সংকট, ওষুধের কাঁচামালের বাড়তি দাম এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিও উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ কো¤পানিগুলোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ করার শর্তে ওষুধ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) এক নেতা বলেন, গত কয়েক বছরে বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামালের খরচ প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে কর্মীদের বেতন প্রায় ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়াও ওষুধ উৎপাদন ব্যয়, প্যাকেজিং মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন, কর্মচারী খরচ, গ্যাস-বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খরচ কয়েক গুণের বেশি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ওষুধের দামের ওপর।
ওষুধ কিনতে আসা কবির হোসেন বলেন, আমি ১৪ বছর ধরে ডায়াবেটিস আক্রান্ত। আমার স্ত্রীও হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি মাসে আমাদের দুজনের ১০ হাজার টাকার বেশি ওষুধ লাগে। অথচ এক বছর আগে তার অর্ধেক টাকা লাগত। তিনি হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের ওষুধ মন্ট্রিল-১০ দেখিয়ে বলেন, গত বছর এ ওষুধ এক পাতা কিনেছি ৪৮০ টাকায়। এখন কিনতে হচ্ছে ৫২৫ টাকা রাখছে। আগে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষার ৫০টি স্ট্রিপের কৌটার দাম ছিল ৭৮০ টাকা। এখন আমাকে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। একইভাবে ইনসুলিন ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ সব ওষুধের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কিন্তু আমাদের ইনকাম তো বাড়েনি। আর এভাবে বাড়তে থাকলে তো ওষুধ না খেয়েই মরতে হবে।
এ সময় আলিফ-লাম-মিম ফার্মার এক কর্মচারী বলেন, কো¤পানি দাম বাড়ালে তো আমাদের কিছু করার নেই। প্যাকেটের রেট অনুযায়ী আমরাও বিক্রি করতে বাধ্য।
শাহবাগে ক্যানসার আক্রান্ত এক রোগীর জন্য ওষুধ কিনতে আসা জুয়েল মিয়া বলেন, আমার ভাই ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। তার দুই দফায় কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা কমে যাওয়ায় তাকে ১৪ বার প্লাটিনাট নিতে হয়েছে। সবসময় ওষুধ খেতে হয়। এতে প্রতিদিন তার ৩/৪ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ওষুধের দাম কম থাকলে তো খরচও কম হতো। তিনি জানান, কেমোথেরাপির খরচসহ এখন পর্যন্ত ৫ লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এ খরচের টাকা জোগান দিতে জমি-জমা যা ছিল সব বিক্রি করতে হয়েছে। এখন তাদের পুরো পরিবার প্রায় নিঃস্ব। সামনের দিনে কীভাবে তার চিকিৎসা চলবে এ চিন্তায় তাদের পুরো পরিবার দিশেহারা।
শাহবাগ এলাকার হ্যাপি ড্রাগসের ম্যানেজার শাকিল হোসেন বলেন, ইনজেকশনসহ বিদেশ থেকে আমদানি করা অনেক ওষুধেরই দাম বেড়েছে। কিছু কিছু ওষুধের দাম আবার দ্বিগুণ হয়েছে। তবে গত কয়েক দিন ধরে তেমন কোনো ওষুধের দাম বাড়েনি।
ওষুধের দাম বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, খেয়াল-খুশিমতো ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করা অন্যায় ও অযৌক্তিক। তাতে করে স্বাভাবিকভাবেই রোগীদের ওপর অনেকটা প্রভাব পড়ে। ওষুধ প্রশাসনের তালিকাভুক্ত ১১৭টি ওষুধের বাইরে বাকি ব্র্যান্ডের দাম নির্ধারণ করতে পারে না। এটা একটা সমস্যা। যদিও দাম বাড়ানো-কমানোর বিষয়টি শুধু অধিদফতরের একার কাজ নয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা জড়িত। তবে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ওষুধের দাম নির্ধারণ হওয়া উচিতে। একই সঙ্গে নৈরাজ্য থামাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। -সময়ের আলো
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ